রাজস্থান (Rajasthan) জঙ্গল, বাঘ, দ্যুতিময় গহনা, প্রাণবন্ত শিল্প এবং স্পন্দনশীল সংস্কৃতির জন্যও সুপরিচিত। রাজস্থান ভ্রমনকালে আপনি এখানকার সৌন্দর্য এবং রাজকীয়তাকে অনুভব করতে পারবেন। এটি এমন একটি রাজ্য যা তার দুর্দান্ত স্থাপত্য, প্রাণবন্ত এবং বর্ণময় সংস্কৃতি এবং সুন্দর শিল্প ও হস্তশিল্পের জন্য পরিচিত। এই রাজ্যটি কিংবদন্তী এবং পৌরাণিক ইতিহাসের মধ্যে প্লাবিত রয়েছে। এখানকার অসামান্য দূর্গ ও প্রাসাদ এবং রাজকীয় ঐতিহ্য ও রাজকীয় সাহসিকতার নির্দশন রাজস্থানকে ভারতের অন্যতম পর্যটনস্থল হিসাবে পরিচিত করেছে।

ভারতের উত্তর-পশ্চিম অংশে অবস্থিত রাজস্থান ‘বর্ণময় ভূমি‘ হিসাবে পরিচিত। ভারতের রাজস্থান রাজ্যের হাজার হাজার বছরের ইতিহাস রয়েছে। এটি সিন্ধু সভ্যতার স্থান ছিল। ভারতের প্রাচীনতম গিরিশ্রেণী আরাবল্লী দ্বারা বেষ্টিত, থর মরুভূমি অঞ্চলে ১৩২,১৪০ বর্গ মাইল এলাকা জুড়ে অবস্থিত, রাজস্থান ভারতের একটি বৃহত্তম রাজ্য। রাজস্থানকে আগে রাজপুতানা বা রাজাদের দেশ বলা হত কারণ এটি দীর্ঘকাল রাজপুত রাজাদের অধীনে ছিল। রাজস্থান, রাজপুত বংশ দ্বারা শাসিত ছিল এবং রাজপুতরা তাদের যুদ্ধ বীরত্ব এবং সাহসিকতার জন্য পরিচিত ছিল। ভারতের উত্তর-পশ্চিম সীমান্তে অবস্থিত এই স্থানটিতে ইতিহাস, পুরাকথা, শৌর্য, প্রণয় ও তার সাথে রূক্ষ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের একটি আকর্ষণীয় সংমিশ্রণ ঘটেছ। অনেক দেশীয় রাজ্যে বিভক্ত এই স্থানের একটি গৌরবময় অতীত রয়েছে এবং এই অঞ্চলের বাসিন্দাদের সাহস ও বীরত্বের কাহিনী ভারতীয় ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ বলে বিবেচিত হয়ে থাকে। রাজস্থানের মোট আয়োতন হলো প্রায় ৩,৪২,২৩৯ বর্গ কিঃমিঃ যার রাজধানী হলো জয়পুর।

রাজস্থানকে ভারতের সর্বাধিক বর্ণিল রাজ্য বলে মনে করা হয়। এটি একটি প্রাণবন্ত রাজ্য এবং এর প্রাণবন্ত সংস্কৃতি রয়েছে যা সারা রাজ্যে দেখা যায় নাচ এবং পোশাকের আধিক্য সহ। রাজস্থানের একটি নিজস্ব উন্নত ও পুরাতন ধ্রুপদী সংগীত রয়েছে যার সাথে রাজস্থান ঘরানা ধ্রুপদী সংগীতের খুব জনপ্রিয় রূপ জৈসলেমারের কালবেলিয়া এবং উদয়পুরের ঘোমার নামে দুটি নাচের রূপ সারা বিশ্বে বিখ্যাত।
রুক্ষ প্রকৃতির মাঝে বিশাল আকারের দুর্গ, অত্যাশ্চার্য প্রাসাদ, বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি, জিভে জল আনা খাবার আর উষ্ণ আতিথ্য নিয়ে মরুর দেশ রাজস্থান। সময়ের বালুঘড়িতে কতই না রঙবদল তার। লাল বেলেপাথর, সোনালি কেল্লা, নীল আভিজাত্য, গোলাপি শহর, পীতাভ সূর্যাস্ত কিংবা মরুভুমির ধূসরতার সঙ্গে মিশে আছে স্থানীয় মানুষের বর্ণময় পরিধেয়ের ছটা। গান, শিল্প ও নৃত্য এ-রাজ্যের ছত্রে ছত্রে গাঁথা।
মোটামুটি ১৫ দিনে রাজ্যটির অনেকটাই দেখে ফেলা যাবে। সফর-পথে পড়বে বিকানের, জয়শলমের, বাড়মের, যোধপুর, মাউন্ট আবু, উদয়পুর, চিতোরগড় ও জয়পুর। চাইলে আরও ১ দিন বাড়িয়ে আজমির দেখে নিতে পারেন।প্রশ্ন হল বাংলাদেশ থেকে কীভাবে বেড়াবেন এই রাজস্থান। আপনি পুরো সফর ট্রেন-বাস-ভাড়া গাড়িতে কিংবা বিমান-ট্রেন-বাস-ভাড়া গাড়িতে করতে পারেন।
রাজস্থান ভ্রমনের সেরা সময় :
রাজস্থান ভ্রমনের সেরা সময় হলো অক্টোবর থেকে মধ্য মার্চ পর্যন্ত। এই সময় খুব বেশি গরম থাকেনা তাই ভ্রমনকারীরা গরমের জন্য বিরক্ত না হয়ে ঘুরে বেড়ানো উপভোগ করতে পারে।
কিভাবে যাবেন :
ট্রেন-বাস-ভাড়া গাড়িতে :
বাংলাদেশ থেকে ট্রেনে কলকাতা চলে আসুন। কলকাতা থেকে ট্রেনে বিকানের গিয়ে পরবর্তী গন্তব্যগুলি ট্রেন বা ভাড়া গাড়ি বা বাসে যেতে পারবেন।
বিমান-ট্রেন-বাস-ভাড়া গাড়িতে
বাংলাদেশ থেকে বিমানে দিল্লি চলে আসুন। সেখান থেকে ট্রেনে বিকানের গিয়ে পরবর্তী গন্তব্যগুলি ট্রেন বা ভাড়া গাড়ি বা বাসে যেতে পারবেন।
এছাড়া যে সকল ট্রাভেলার কম খরচে ভ্রমনের কথা ভাবছেন তাহারা স্থলপথে কলকাতা/শিলিগুড়ি/হিলি/বেনাপোল হয়ে যেতে চাইলে খরচ নিম্নরুপ;
শিলিগুড়ি রুট:
ঢাকা/রংপুর হতে চলে আসুন বাংলাবান্ধা/ফুলবাড়ী ইমিগ্রেশনে তারপর বাংলাদেশ ও ভারতের ইমিগ্রেশন শেষ করুন। এখানে খরচ হতে পারে ২০০/- প্রায়। বাংলাবান্ধা/ফুলবাড়ী হয়ে পার হলে তিনবাতী মোড় হয়ে নিউ জলপাইগুড়ি ট্রেন স্টেশনে চলে আসুন। ভাড়া ১০ রুপি। এছাড়া যে সকল যাত্রী বুড়িমারী/চেংড়াবান্ধা হয়ে পার হবেন তারা ২০+৭০=৯০ রুপি খরচ করে চলে আসুন নিউ জলপাইগুড়ি ট্রেন স্টেশনে।
সেখান হতে ট্রেন ধরে চলে যান নিউ দিল্লি এবং পরবর্তী গন্তব্য যদি হয় আজমীর/জয়পুর তাহলে ট্রেন ধরে চলে যান। অতপর পর্যায়ক্রমে যোধপুর ও জয়সেলমার ও ছত্রিশগড় ভ্রমন করুন। খরচ শিলিগুড়ি-নিউ দিল্লি=৭০০-৯০০/- এবং নিউ দিল্লি হতে জয়পুর/আজমীর ট্রেন ভাড়া ১৫০-২০০/-। থাকা ট্রেনে এবং খাবার নিজ ইচ্ছামত ক্রয় করে খেতে পারেন।
এছাড়া বিমানে শিলিগুড়ির বাগডোহরা বিমান বন্দর হতে দিল্লি পৌছে চলে যেতে পারেন রাজস্থান।
কোলকাতা রুট:
আপনি যদি হিলি/বেনাপোল-পেট্রাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে প্রবেশ করেন তাহলে হিলি হতে কোলকাতা ট্রেন ভাড়া ১৫০ রুপি এবং বাস ভাড়া ৩৫০ রুপি। বেনাপোল হতে কোলকাতা ভাড়া ৩০ রুপি। চলে যান শিয়ালদহ অথবা হাওড়া ট্রেন স্টেশনে। শিয়ালদহ হতে আজমীর এক্সপ্রেস (বর্তমানে মহাত্মা গান্ধী এক্সপ্রেস) ট্রেন ধরে চলে যান আজমীর। তারপর পরবর্তী গন্তব্য নির্ধারন করুন। হাওড়া হতে রাজধানী এক্সপ্রেস বা অন্য যে কোন ট্রেন ধরে চলে যেতে পারেন জয়পুর/যোধপুর। আজমীর এক্সপ্রেস ট্রেনের ভাড়া ৬০০-৮০০/-। রাজধানী এক্সপ্রেসের ভাড়া ১৮০০-২২০০/- (খাবার সংযুক্ত)।
এছাড়া কোলকাতা দমদম বিমানবন্দর হতে সরাসরি নিউ দিল্লি হয়ে চলে যেতে পারেন জয়পুর/যোধপুর।
কোথায় থাকবেন:
রাজস্থানে উচ্চ বিলাসবহুল হোটেল থেকে সাধারণ মানের অসংখ্য হোটেল রয়েছে। রাজস্থানের হোটেলগুলি তাদের আতিথেয়তা এবং পরিষেবার জন্য অবকাশ যাপনের একটি আদর্শ স্থান হিসেবে পরিচিত। জয়পুর/যোধপুর/জয়সেলমার/ছত্রিশগড় এ স্থানভেদে ও হোটেলের মান ভেদে ভাড়া কমবেশী হতে পারে তবে সাধারন ভাড়া ৬০০-৮০০ রুপি। যেখানে যাবেন অবশ্যই প্রথমেই হোটেল বুকিং করবেন। চেষ্ঠা করবেন অনলাইন বুকিং দিতে। এক্ষেত্রে প্রদর্শিত ভাড়ার অতিরিক্ত দাবী করতে পারে না। তবে সমস্যা নাই সরাসরি কথা বলে ভাল মানের হোটেলে উঠলেই হবে। লক্ষ রাখবেন বিদেশীদের জন্য হোটেল নিদ্দিষ্ট করা থাকে। লোকাল হোটেলে ও কমদামী হোটেলে শুধুমাত্র ভারতীদের জন্য। এজন্য হোটেলে ঠুকেই বলবেন ফরেইন পারমিট আছে কি না। শহরের নিরিরিলি পরিবেশে থাকার চেষ্ঠা করুন প্রকৃতি উপভোগ করতে পারবেন।
কি খাবেন:
রাজস্থানে বাঙালী খাবার খুব ব্যয়বহুল। এখানে ভাতের প্লেট ১২০ রুপি এবং সবজীর দাম বেশী। একজনের ভাত খাবার খরচ ৫০০+ রুপি। তাই চেষ্টা করবেন একবেলা ভাত ও দুই বেলা রুটি খেতে। রুটি এখানে ৫ রুপি এবং আমাদের জন্য ২টি রুটিই যথেষ্ঠ। এগুলো বড় ধরনের হয়ে থাকে। রুটি খেলে খাবার বিল ৪০ রুপির বেশী হবেনা। এখানে মাংস বেশ ভালো পাওয়া যায়।
রাজস্থান ভ্রমনে খরচ:
আপনি যদি বাজেট ভ্রমনকারী হন তাহলে আপনার খরচ ৩০,০০০/- – ৪০,০০০/- টাকার মধ্যে থাকবে, যদি মধ্য পরিসীমার পর্যটক হন তাহলে আপনার খরচ হবে ৪০,০০০/- – ৫০,০০০/- টাকার মধ্যে এবং এক জন উচ্চ শ্রেনীর পর্যটকের ক্ষেত্রে ৬০,০০০/- – ৮০,০০০/- টাকা খরচ হয়ে থাকে।
(কালেক্টেড)